ঢাকার তালতলায় রাস্তায় কাঁচাবাজার বসিয়ে ৭০ লাখ টাকা আত্মসাৎ

কাঁচাবাজার

রাজধানীর আগারগাঁও বাজারের নির্ধারিত জায়গায় হচ্ছে বহুতল ভবন। আগের দোকানগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে। ভবন নির্মাণের সময়টুকুতে ব্যবসার সুযোগ করে দিতে এর সামনের রাস্তার ওপর টিনের ছাউনি দিয়ে বসানো হয়েছে বাজার। অভিযোগ উঠেছে, অস্থায়ী বাজারের ১২২টি দোকান বরাদ্দের বিনিময়ে প্রায় ৭০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন আগারগাঁও বাজার বণিক সমবায় সমিতির বর্তমান কমিটির কোনো কোনো নেতা।

তবে সমিতির নেতাদের দাবি, অস্থায়ী বাজার নির্মাণের ব্যয় হিসেবে সমিতির পক্ষ থেকে এ টাকা নেওয়া হয়েছে। পরে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে ওই টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বলছে, তারাই অস্থায়ী বাজার নির্মাণ করে দিয়েছে, সমিতির কাছ থেকে কোনো টাকা নেওয়া হয়নি।

আগারগাঁও বাজারের ১৩তলা ভবনটি নির্মিত হচ্ছে তালতলা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন জায়গায়। গত সেপ্টেম্বরে শুরু হয়েছে নির্মাণকাজ।

সরেজমিনে দেখা যায়, নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের দক্ষিণ পাশ ঘেঁষে থাকা প্রায় ১৫ ফুট প্রশস্ত রাস্তার ১০০ মিটারের মতো অংশ দখল করে টিনের ছাউনির বাজার বসানো হয়েছে। সেখানে সবজি, মুদিপণ্য, মাছ-মাংস, ওষুধ, কাপড়চোপড়, হার্ডওয়্যার, মুঠোফোনসহ বিভিন্ন পণ্যের দোকান রয়েছে।

বণিক সমিতি ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান উভয়েই অস্থায়ী বাজার নির্মাণ করে দিয়েছে বলে দাবি করেছে।

চলাচল বন্ধ করে বাজার

স্থানীয় লোকজন বলছেন, বাজারের দখলে যাওয়া রাস্তাটি তালতলা বাজার সড়ক নামে পরিচিত ছিল। এই রাস্তায় গাড়িসহ সব ধরনের যানবাহন চলত। আশপাশের বাসিন্দারা হেঁটেও মিরপুরগামী বেগম রোকেয়া সরণিতে যেতে পারতেন। কিন্তু বাজার বসানোয় এখন কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারে না।

ওই সড়ক দিয়ে রোকেয়া সরণিতে নিয়মিত চলাচল করতেন তালতলায় থাকা পরিকল্পনা বিভাগের আবাসিক ভবনের বাসিন্দারা। এখন তাঁদের ঘুরপথে তালতলা সরকারি কলোনি সড়ক দিয়ে চলাচল করতে হয়।

বণিক সমিতির সদস্য ও অস্থায়ী বাজারে দোকান পাওয়া ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বর্তমান কমিটির নেতারা অস্থায়ী বাজার নির্মাণের নামে দোকান পাওয়া প্রত্যেকের কাছ থেকে এককালীন ৬০ হাজার করে প্রায় ৭০ লাখ টাকা নিয়েছেন। এই টাকা সমিতির ব্যাংক হিসাবে জমা কিংবা ঠিকাদারকে দেওয়া হয়নি। নেতারা আত্মসাৎ করেছেন এ টাকা।

টাকা উঠিয়ে সমিতির সাধারণ সম্পাদকের কাছে দেওয়া হয়েছে। এটা ঠিকাদারকে দেওয়া হয়েছে কি না, জানি না।

টিনের ছাউনির বাজারে দোকান নেওয়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে ১২ জনের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। নাম প্রকাশ না করার করার অনুরোধ জানিয়ে তাঁরা বলেছেন, তাঁদের প্রত্যেককেই কমিটির নেতাদের টাকা দিতে হয়েছে।

এই ব্যবসায়ীরা বলেন, দোকান পেতে হলে নির্মাণ খরচের টাকা দিতে হবে বলে টাকা নেওয়া হয়েছে। সমিতির পক্ষে শাহাদাৎ হোসেন ও নূর হোসেন এ টাকা আদায় করেছেন। এ জন্য কোনো রসিদ দেননি ও চুক্তিপত্রও করেননি। শুধু বলেছেন, মূল বাজারের নির্মাণকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ব্যবসা করা যাবে।

নূর হোসেন ও শাহাদাৎ হোসেন সমিতির পরিচালক পদে আছেন। নূর হোসেন বলেন, ‘টাকা উঠিয়ে সমিতির সাধারণ সম্পাদকের কাছে দেওয়া হয়েছে। এটা ঠিকাদারকে দেওয়া হয়েছে কি না, জানি না।’ আর গত বুধবার শাহাদাতের মুঠোফোনে কল দিলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

কমিটির নেতারা মাটি বিক্রির টাকাও আত্মসাৎ করেছেন বলে সমিতির সদস্যদের অভিযোগ। তাঁরা বলেন, ভবনের নির্মাণকাজের জন্য প্রায় ২৩ হাজার বর্গফুটজুড়ে ২৩ ফুটের মতো গভীর করে খনন করা হয়েছে। এই মাটিও সমিতির নেতারা বিক্রি করেছেন। কিন্তু টাকার হিসাব সমিতিকে দেওয়া হয়নি।

সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুন নুর শাহীর দাবি, কমিটিই টিনের ছাউনির অস্থায়ী বাজারটি নির্মাণ করে দিয়েছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নির্মাণ খরচের জন্য এ টাকা নেওয়া হয়েছে। পরে টাকা ঠিকাদারকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। নুর দাবি করেন, ওই রাস্তা পরিত্যক্ত।

তবে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বলছে, টিনের ছাউনির নির্মাণে ব্যবসায়ী সমিতির কাছ থেকে তারা কোনো টাকা নেয়নি। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নুরানি কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের প্রকল্প ব্যবস্থাপক তারেক আহমেদ (হাসান) প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যবসায়ী সমিতির কাছ থেকে আমরা কোনো টাকা নিইনি।’

রাস্তার জায়গায় বাজার নির্মাণ ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের শেরেবাংলা নগর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীদের কেউ নাম প্রকাশ করে মন্তব্য করতে চাননি। তাঁরা জানান, মানবিক দিক বিবেচনায় ঠিকাদারের খরচে ব্যবসায়ীদের জন্য অস্থায়ী বাজার করে দেওয়া হয়েছে। এ জন্য ব্যবসায়ী বা সমিতির কাছ থেকে আলাদা করে কোনো টাকা নেওয়া হয়নি। মূল ভবনের নির্মাণ শেষে প্রকল্পের সংশোধনীতে টিনের ছাউনির কাঠামো বাবদ ঠিকাদারকে ভাড়া দেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *